স্বদেশ ডেস্ক:
হলমার্ক কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকিং খাতে আরেকটি আলোচিত ঘটনা ছিল বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঋণকেলেঙ্কারি। গ্রুপটি প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আর পরিশোধ করেনি। বরং গ্রুপটির এমডি খাজা সোলায়মান ঋণ পরিশোধ না করে রাতারাতি পাড়ি জমান বিদেশে। সেই আলোচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপ আবারো ছয়টি ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করেছে। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন করে বিশেষ সুবিধায় ঋণ নবায়ন কিভাবে পেতে পারেন সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর কাছে জানতে চেয়েছে। সংশ্লিষ্ট এক দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক সূত্র জানিয়েছে, আলোচিত বিসমিল্লাহ গ্রুপ পাঁচটি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিল। ২০১২ সালে হলমার্ক গ্রুপের এমডি ঋণ পরিশোধ না করে যখন পালিয়ে যান, তখন আলোচ্য ছয় ব্যাংকের ঋণের স্থিতি ছিল এক হাজার ২০০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর মধ্যে ছিল সরকারি খাতের জনতা ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংক। এর মধ্যে বেশির ভাগ ঋণ ছিল জনতা ব্যাংকের। কিন্তু এর পরে আর কোনো ঋণ পরিশোধ করেনি গ্রুপ। ওই সব ঋণ এখন ব্যাংকগুলোর কাছে গলার কাঁটা হয়ে আছে। সবগুলো ঋণই এখন মন্দ মানের খেলাপি ঋণ। ওই সব ঋণ পরিশোধ না করেই নতুন করে ঋণের আবেদন করেছে গ্রপটি।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিসমিল্লাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান খাজা সোলায়মান ছয়টি ব্যাংকের কাছে আবার নতুন করে ঋণের জন্য আবদার করেছেন। হঠাৎ করে ঋণের আবেদন করার যৌক্তিকতা তিনি নিজেই তুলে ধরেছেন। আর তা হলো নতুন করে ঋণ নিয়ে তিনি আবার ব্যবসা চালু করবেন। আর এ ব্যবসা থেকে যে মুনাফা করবেন তা দিয়ে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করবেন। একই সাথে বিসমিল্লাহ গ্রুপের নামে দায়ের করা যেসব মামলা রয়েছে তা কিভাবে নিষ্পত্তি করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। পাশাপাশি তার মূল ঋণ কত ছিল এখন সুদসহ কত হয়েছে সে বিষয়ে অবহিত করতে ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ করেছে। এসবের বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত ১৬ মে জারি করা বিশেষ সুবিধায় কিভাবে ঋণ নবায়ন করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ ঋণের মন্দ ঋণ নবায়ন ও এককালীন এক্সিটের সুবিধা দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্যাডে খাজা সোলায়মানের ঢাকা অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে ব্যাংকগুলোর কাছে ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই ঠিকানায় ব্যাংকগুলোর পক্ষে থেকে এ চিঠির জবাব পাঠানো হয়েছে রেজিস্ট্রি ডাকযোগে। কিন্তু ব্যাংকের চিঠি কেউ গ্রহণ করেননি। ফলে ওই চিঠি ব্যাংকের কাছে ফেরত এসেছে।
চিঠিতে ব্যাংকগুলো, গ্রুপের ঋণের স্থিতি উল্লেখ করে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট বাবদ অর্থ পরিশোধ করে ঋণ নবায়নের জন্য ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে বলেছে। ওই আবেদন পেলে ব্যাংক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
উল্লেখ্য, ২০১২ ও ২০১৩ সালে বিসমিলাহ গ্রুপ ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় এক হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করে। পরে ভুয়া এলসির মাধ্যমে পুরো অর্থই বিদেশে পাচার করেছে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক ৫২৭ কোটি টাকা, প্রাইম ব্যাংক থেকে ৩২৭ কোটি টাকা, প্রিমিয়ার ব্যাংক থেকে ৬১ কোটি টাকা, যমুনা ব্যাংক ১৫৪ কোটি টাকা এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাক ১১০ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ করে।
জানা গেছে, বিসমিল্লাহ গ্রুপের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। ফলে খাজা সোলায়মানসহ এর বেশির ভাগ শীর্ষ নির্বাহীরা বিদেশে পালাতক রয়েছেন। এর মধ্যে বিসমিল্লাহ গ্রুপের এমডি খাজা সোলায়মান ও চেয়ারম্যান নওরিন হাবিবসহ গ্রুপের কিছু কর্মকর্তা এখন দুবাইয়ে আছেন। ওখানে তারা একটি অভিজাত হোটেলের ব্যবসা করছেন।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিসমিল্লাহ গ্রুপের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা হয়েছে। এখন আদালতই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।